এস এম তাজাম্মুল, মণিরামপুর:
অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা অগ্রণী দুয়ার ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ঢাকুরিয়া ইউনিয়নে সংঘটিত হয়েছে কোটি টাকার জালিয়াতি। প্রায় ৮ শতাধিক গ্রাহকের ব্যক্তিগত হিসাবে থেকে প্রায় ২ কোটি টাকা (১ কোটি ৮২ লাখ) আত্মসাতের ঘটনায় ব্যাংকের স্থানীয় এজেন্ট ও কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ অনুযায়ী, অগ্রণী দুয়ার ব্যাংকিংয়ের ম্যানেজার মো. তরিকুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক নিশিত মণ্ডল ও ডিলার মো. আব্দুল হান্নান দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকদের অজান্তে তাদের এফডিআর ও সঞ্চয়ী হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন করে আসছিলেন। এই জালিয়াতির সঙ্গে অগ্রণী ব্যাংক লিঃ মণিরামপুর শাখা ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ পারভেজের সম্পৃক্ততারও অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তরিকুল ইসলাম রাজনৈতিক পরিচয় (ঢাকুরিয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক) ও প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেন। আত্মসাৎ করা অর্থে তিনি রাজকীয় বাড়ি নির্মাণ, বাজারে বড় মুদি দোকান এবং মাছের ঘের ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে, নিশিত মণ্ডল ঢাকুরিয়া বাজারে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ সুদের কারবারি (এনজিও) ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। তার বাবাকে হুমকি দিয়ে এবং হামলার ভয় দেখিয়ে নিশিতকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেছেন তরিকুল ইসলাম—এমন অভিযোগও উঠেছে।

অনুসন্ধান সূত্র জানায়, অভিযুক্তরা সম্মিলিতভাবে একটি চক্র গঠন করে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করেন। জালিয়াতির ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৪ জন গ্রাহক প্রায় ৫১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা ফেরতের দাবি জানিয়েছেন এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

সর্বশেষ গত ২৯ অক্টোবর, অগ্রণী ব্যাংকের অতিরিক্ত জেলা ব্যবস্থাপক ও মণিরামপুর শাখা ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ পারভেজ ঘটনাস্থল ঢাকুরিয়া পরিদর্শন করেন। তিনি ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করে এজেন্ট ডিলার মো. আব্দুল হান্নানকে নির্দেশ দেন—পলাতক তরিকুল ইসলাম ও নিশিত মণ্ডলকে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে হাজির করে ভুক্তভোগীদের পাওনা পরিশোধ করতে।

তবে তদন্ত শুরু হতেই মূল অভিযুক্ত তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের ঘুষের প্রলোভন দিয়ে ব্যর্থ হয়ে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে এমন জালিয়াতি পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট করছে। দ্রুত তদন্ত ও ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরত এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।